তথ্য বলছে, দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে, নানা কৌশলে অবৈধ অস্ত্র ঢোকে বাংলাদেশে। তারপরে, নানা সিন্ডিকেটে হাত বদলে চলে যায়, সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতিকারীদের কাছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আধিপত্য বিস্তার ও রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক খুনের ঘটনায় ব্যবহার হচ্ছে, এসব অবৈধ অস্ত্র। তারা বলছেন, সীমান্তে নজরদারি না বাড়ালে অস্ত্র প্রবেশ থামবে না। তবে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার আগের চেয়ে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
প্রতিবেশী দেশের গণমাধ্যম বলছে, ভারতের বিহারের মুঙ্গের প্রদেশে তৈরি হওয়া অস্ত্র, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা হয়ে, বাংলাদেশে পাচার হয়। সেদেশের টিভিতে প্রচারিত এক প্রতিবেদনে বিহারের একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে কথা বলতে দেখা গেছে। তিনি বলছিলেন, এসব অস্ত্র বাংলাদেশের দিকে বিক্রি করা হয়।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে জানা যায়, স্থল ও জলপথের ৩০টি রুট দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র ঢোকে বাংলাদেশে। তার মধ্যে অন্যতম রুটগুলো হলো, টেকনাফের কক্সবাজার ও উখিয়া সীমান্ত। মূলত অস্ত্রগুলো মিয়ানমার থেকে এই পথে আসে। এছাড়া, উত্তরবঙ্গের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও হিলি সীমান্ত এলাকা দিয়ে অস্ত্র চোরাচালানের তথ্য পাওয়া যায়। দক্ষিণবঙ্গের সাতক্ষীরা ও যশোর সীমান্ত দিয়েও অস্ত্র ঢোকে বাংলাদেশে।
কর্নেল আশিক বিল্লাহ, পরিচালক, লিগ্যাল ও মিডিয়া উইং র্যাব বলেছেন, অবৈধ অস্ত্রের একটা বড় অংশ পাশ্ববর্তী দেশসমূহ থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের দেশে প্রবেশ করে। সেটি অনেক সময় দূর্গম বনাঞ্চলের ভেতর দিয়ে, কখনো পাহাড়ি অঞ্চলের ভিতর দিয়েও এই ধরনের অন্ত্রের বড় চালান বাংলাদেশে প্রবেশ করতো।
একবছর আগে, নিউজ টোয়েন্টিফোরের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকায়, দেশীয় অস্ত্র তৈরি করে, ব্যবহার করছে সন্ত্রাসীরা।
আবার অবৈধ উপায়ে পাচার হয়ে আসা অস্ত্রগুলোও আসে দুষ্কৃতিকারীদের হাতে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন সাংকেতিক ভাষা ও কৌশল ব্যবহার করে, সীমান্তরক্ষীদের ফাঁকি দেয়, পাচারকারীরা।
মেজর ( অব: ) জিল্লুর রহমান, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক বিজিবি কর্মকর্তা বলছেন, তারা বাংলাদেশের সীম ব্যবহার করে না, ভারতের সীম ব্যবহার করবে তার কাউন্টারপার্টকে বলে গরু, সে জানে গরু মানে হচ্ছে নাইন মিলিমিটার পিস্তল। তারপর যখন আপনি সিক্স টু মিলি মিটার পিস্তলের কথা বলবেন তখন সে বলবে বকনা। তারা বুলেটের নাম দেয় ক্যাপসুল বা বিচি। লেনদেন হয় হুন্ডির মাধ্যমে।
অবৈধ অস্ত্রগুলো, কয়েক দফা হাত বদলে, বড় শহরগুলোতে পৌঁছায়, মাঝখানে লেনদেন হয়, মোটা অঙ্কের টাকা-বলছে র্যাব।
র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইং এর পরিচালক কর্নেল আশিক বিল্লাহ, বলেছেন, অর্থ লেনদেন কয়েকটি ধাপে হয়ে থাকে। এটি কয়েকবার হাত বদল হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে । এর পেছনে মোটা অংকের আর্থিক লেনদেন হয়ে থাকে।
তবে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর দাবি, প্রশাসনের নজরদারিতে গ্যাং কালচার এখন অনেকটাই স্থিমিত। কমেছে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার।
সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার বলেছেন, অস্ত্র সংগ্রহ করে গোপন করে রাখা যতোটা সহজ, সেই অস্ত্র ব্যবহার করে গোপনে লুকিয়ে রাখা এখন আর এতোটা সহজ নয়। যদি কারো সে দূরাশা থাকে তাহলে বলব, সরকারের সক্ষমতা বা আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সক্ষমতার সঙ্গে চ্যালেঞ্জে না যাওয়াই ভালো। কোন মতেই কেউ পারবে না।
র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইং এর পরিচালক কর্নেল আশিক বিল্লাহ, বলেছেন, র্যাব অত্যন্ত দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কেউ অবৈধ অস্ত্র আনছে এমন খবর পেলে র্যাব যে কোন মূল্যে তাকে গ্রেপ্তার করে যথাযথ আইনের আওতায় আনবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অবৈধ অস্ত্রের উৎসগুলো বন্ধ করতে না পারলে, অনুকূল পরিবেশে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে, উঠতি সন্ত্রাসীরা।